সমাজ পরিবর্তনের দিকপাল ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা

সমাজ পরিবর্তনের দিকপাল ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা
॥ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম ॥
রাঙ্গুনিয়াকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে একটি সমৃদ্ধশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ৬০-৭০ এর দশকে অবদান যাঁদের সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে অন্যতম মরহুম আলহাজ¦ মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নিরব প্রচারবিমুখ মানুষটি ১৯৩১ সালের ২ জানুয়ারি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া গ্রামের ধর্মপরায়ন সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবরে (২১ আশ্বিন ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার) তাঁর পিতা আলহাজ্ব জেয়াব উদ্দিন পবিত্র হজ্ব পালনকালে মদিনা শরীফে ইন্তেকাল করেন এবং পবিত্র জান্নাতুলবাক্বীতে শায়িত আছেন। ১৯৬৮ সালের ২৬ জানুয়ারি মাতা আলহাজ্ব আমির খাতুন পবিত্র হজ্ব পালনকালে মক্কা শরীফে ইন্তেকাল করেন এবং পবিত্র জান্নাতুল মাওয়াতে শায়িত আছেন। আলহাজ্ব মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা তাঁদের একমাত্র সন্তান।
তিনি শৈশবে জনগণের ওপর বৃটিশ শাসকগোষ্ঠীর নানা অত্যাচার, নিপীড়ন, যুলুম, নির্যাতন সচক্ষে দেখেছেন। ফলশ্রুতিতে ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি এলাকার মানুষের অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট ও শিক্ষা অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে খুবই ভাবতেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এলাকায় মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় মা-বাবার স্নেহমায়া ত্যাগ করে অশ্রুসজল নয়নে পড়ালেখা করতে চলে যান বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা হাই স্কুলে। এই স্কুলে তখন পড়ালেখা করতেন বাল্যকালের সাথী বাবু চন্দ্র শেখর দাশ। বিকেল বেলায় তাঁরা দু’জনে গল্প করতেন আর অশ্রুসজল নয়নে ভাবতেন নিজেদের এলাকাবাসীর সুখ-দুখের কথা, গ্রামের কথা। শাকপুরা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি শাকপুরা হাই স্কুল থেকে বদলি হয়ে রাঙ্গুনিয়া হাই স্কুলে যোগদান করলে সাথে করে তাঁকেও নিয়ে আসেন। ১৯৫১ সালে শিলক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এ সময় পদুয়া ইউনিয়নের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথ খুব কঠিন হলেও তাঁর লক্ষ্য ও পথচলা ছিল অগ্রবর্তী। ভর্তি হন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজে। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালীন তাঁর সহপাঠী (রুমমেট) ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার কৃতিপুরুষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহমুদ শাহ্ কোরেশী, পটিয়ার কৃতিপুরুষ প্রাক্তন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম এমপি।
মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, তখন তিনি চট্টগ্রাম কলেজে নেতৃত্ব দানকারীদের অনুপ্রাণিত করে চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করেন।
পিতার ইন্তেকাল হলে তাঁর পড়ালেখায় ছেদ পরে। তখন তিনি নিজ গ্রামে এসে শিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। বিনাবেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন পদুয়া এম ই স্কুলে। তিনি এ স্কুলের ছাত্রও ছিলেন। এছাড়াও বিনাবেতনে শিক্ষকতা করেন সারাশিয়া জুনিয়র হাই স্কুল ও মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায়। স্কুল সময়ের আগে-পরে এলাকার ছাত্রদের বিনাবেতনে নিজ বাড়িতে পড়ালেখা করাতেন। আজ তাঁর অনেক ছাত্র স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর মেট্রিকুলেশন নির্বাচনী পরীক্ষায় নিজের ‘জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় লিখেছিলেন, “আমি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হতে চাই না, গ্রামে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।”
১৯৬০ সালে তিনি ১০নং পদুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ও স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ সুযোগ হাতে ধরা দিল। হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। ১৯৬০ সালে পদুয়া জুনিয়র হাইস্কুলকে হাই স্কুলে উন্নীতকরণে যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন (২ একর বা ৫ কানি) ছিল, তা তিনি দান করে হাই স্কুল প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ অবদান রাখেন। চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য তিনি মেধা, ক্ষমতা ও অর্থ ব্যয় করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালে উত্তর পদুয়া জুনিয়র হাই স্কুল পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুলের মর্যাদা লাভ করে; যা আজ উত্তর পদুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এ বিদ্যালয়ে তিনি অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। সে যুগে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ ব্যাপার ছিল। ১০ নং পদুয়া ইউনিয়নে এটিই প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়। অনেকে তাঁকে নিজ নামে বিদ্যালয়ের নামকরণের প্রস্তাব করলেও তিনি বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে নির্লোভ ও উঁচুমনের পরিচয় দেন। এসময় তিনি নারিশ্চা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুরুশিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারেও গুরুত্ব দিয়েছেন। সে সময়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ১৯৬৮ সালে হজ্বব্রত পালন করে দেশে এসে এলাকায় ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এক পর্যায়ে রাঙ্গুনিয়া নুরুল উলূম ফাযিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তাঁর পীর হযরত আলহাজ্ব নূরুচ্ছফা নঈমী (রাহ্.)-এর শরণাপন্ন হয়ে তাঁর দোয়া ও পরামর্শে ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে ১৯৭০ সালে উত্তর পদুয়া মদিনাতুল উলূম দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
রাঙ্গুনিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাঙ্গুনিয়ায় প্রথম একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে তৎকালীন ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ ইউনিয়ন থেকে অর্থ এবং ছাত্র দিয়ে সহযোগিতা করার আহবান জানালে তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নিজে এবং অন্যদের কাছ থেকে অর্থ ও যথেষ্ট সংখ্যক ছাত্র দিয়ে ১৯৬৩ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া পদুয়া ডিগ্রী কলেজ যখন চরম অর্থনৈতিক ও ছাত্র-ছাত্রী সংকটে পতিত হয়, তখন তিনি কলেজের সংকট নিরসনে নিয়ম অনুযায়ী অর্থ দান করে এ কলেজে আজীবন দাতা সদস্য হন এবং অনেককে দাতা সদস্য হতে উৎসাহিত করেন। এ কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংকট নিরসনে তিনি এলাকার প্রতিটি মানুষকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাতে অনুরোধ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এ কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্র্র বাতিল করা হলে, তিনি ঢাকায় গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আলহাজ্ব সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি’র নিকট বিষয়টি অবহিত করেন এবং তিনি কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করেন।
১৯৬০ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি রাঙ্গুনিয়াব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করায় পূর্বেকার পরিচিতি মাস্টার নূরুচ্ছফা অনেকটা হারিয়ে যান। রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান রাঙ্গুনিয়া থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কাশেম ১৯৭৮ সালে বিএনপি’র এক সভায় যোগদান উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তিনি সকলের কাছে জানতে চান যে, “এ এলাকায় তিনজন নূরুচ্ছফার কথা জানি। একজন আলহাজ্ব মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা (প্রাক্তন চেয়ারম্যান), আরেকজন বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুচ্ছফা তালুকদার এবং অন্যজন এডভোকেট নূরুচ্ছফা তালুকদার। আমি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় মাস্টার নূরুচ্ছফা কে আমার সাথে পেয়েছিলাম। ছেলেটি খুবই উদ্যমী, মেধাবী, বিনয়ী ও সাহসী ছিল। জানি না এখন কোথায়? তবে বাড়িটা এখানে কাছাকাছি কোথাও হবে। তিনি মাস্টার নূরুচ্ছফা সম্পর্কে উপস্থিত সকলের কাছে জানতে চান। এসময় সেখানে সমবেতদের সাথে উপস্থিত ছিলেন মাস্টার হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা চেয়ারম্যান। তিনি রসিকতা করে বললেন, নূরুচ্ছফা মাস্টার মারা গেছেন।’ এ কথা শুনে জনাব কাশেম সাহেব খুবই ব্যতিত হলেন, আফসোস করলেন এবং মুনাজাত করলেন। পরে পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কাশেম তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন আমি অনেকদিন থেকে আপনাকে মনে মনে খোঁজ করছিলাম। আপনি চেয়ারম্যান নূরুচ্ছফা হওয়াতে মাস্টার নূরুচ্ছফাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও রুচিবোধের পরিচয় ফুঠে উঠে। ইউনিয়নের সালিশ-বিচার ও প্রশাসনিক কার্যক্রম তিনি এ কার্যালয়ে সম্পন্ন করতেন। তিনি নির্দিষ্ট অফিস সূচি ঠিক করে প্রতিদিন যথাসময়ে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত থেকে এলাকার নানাবিধ সমস্যার সমাধান করতেন। আজো এ পরিষদ ভবন কালের স্বাক্ষী হয়ে তাঁর স্মৃতি বহন করছে।
১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ১০নং পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়কালে তিনি কোনো মামলা মহকুমা/জেলা সদরে আসতে দিতেন না। ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে এলাকায় উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করতেন। এসময়ে পদুয়া বিভিন্ন স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশেষ বিশেষ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, ব্রীজ (কাঠের) নির্মিত হয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত সরকারী ডাক্তার থাকার ব্যবস্থা করেন। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে পুরো ইউনিয়নে চৌকিদার, দফাদারকে এলাকা পাহাড়া দেওয়ার ব্যাপারে খুবই চাপে রাখতেন। ফলে চুরি ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম অনেকটা নিয়ন্ত্রনে ছিল। তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা বিস্তার, যোগাযোগ ব্যবস্থান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবাসহ সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে অত্র ইউনিয়নের নবরূপায়নের বীরপুরুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ৬০ এর দশকে যুব সমাজের জন্য তিনি বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষ বিশেষ দিবসে তিনি ইউনিয়ন কাউন্সিলের উদ্যোগে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।
১৯৫৩ সালে তিনি উত্তর পদুয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীতে উক্ত মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে ইন্তেকাল পর্যন্ত তা সফলতার সাথে পালন করেছিলেন। তিনি অত্র মসজিদে এবং শিলক মেহেদির তালুক জামে মসজিদে জমি দান করেন। ৭০’র দশকে পদুয়া ইউনিয়নে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন পরিষদ গঠন করে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন শুরু করেছিলেন।
ন্যায় বিচারক হিসেবে সুনামের কারণে তিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জজ আদালতে জুরি বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেন। এলাকার লোকজন তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র, সম্পদের দলিল দস্তাবেজ, স্বর্ণালংকার ও টাকাপয়সা তাঁর কাছে গচ্ছিত রাখতেন। এজন্য এলাকার সর্বসাধারণের কাছে তিনি আমানতদার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পদুয়ার জনগোষ্ঠীর জানমাল, ইজ্জত, সম্ভ্রম সুরক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে প্রতি রাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পাহারা দিতেন। এ কারণে অত্র এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সকল মহলের কাছে তিনি অন্যতম শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। তাছাড়াও অনেক মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন ইউপি সদস্য বাবু চন্দ্রকুমার আচার্য্য (চন্দ্র ঠাকুর) এর মাধ্যমে উনার কাছ থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং পরবর্তীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’র অনুপ্রেরণায় প্রথমে জাগদল ও পরে বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১০নং পদুয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং রাঙ্গুনিয়া থানা বিএনপির প্রথম কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মুহাম্মদ নূরুচ্ছফা চেয়ারম্যান ছিলেন অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ ব্যক্তি। ৬০’র দশক থেকে ৭০’র দশক পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয়, জেলা-থানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, এমপি-মন্ত্রীগণ যখনই পদুয়া আসতেন তাঁর বাড়িতে আথিতেয়তা গ্রহণ করতেন।
২০০৪ সালে নিজ এলাকায় তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আলহাজ¦ নূরুচ্ছফা বিদ্যানিকেতন’।
জনহিতকর কর্মে অবদানের স্বীকৃতিতে ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মডেল শাখা তাঁকে ‘মানবাধিকার পুরস্কার’ (সম্মাননা ও সনদ) প্রদান করে। ২০১০ সালের ২৪ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে আদর্শ শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, সংগঠক, সমাজসেবক, ধর্মানুরাগী, দানশীল, পরধর্মমত সহিষ্ণু, সৎ, দক্ষ, দূরদর্শী, কর্তব্য পরায়ণ, রাজনীতিবিদ ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ সুন্দর মনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষটি বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৬ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর উত্তরাধীকারীরা প্রত্যেকে সমাজে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, নাতি-নাতনিরা অনেকে ডাক্তার, প্রকৌশলী ও বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন।
লেখক: প্রাবন্ধিক।

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.